অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য নানা রকম পাসওয়ার্ড মনে রাখতে গিয়ে বিরক্ত?

0
16030

অনলাইনে যাঁদের একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁদের সবগুলো অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলেও দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। এ ধরনের সমস্যার ভুক্তভোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরাও মনে করেন যে, প্রচলিত পাসওয়ার্ড পদ্ধতি যথেষ্ট বিরক্তিকর আর সেকেলে। এমনকি, এই পাসওয়ার্ড সহজেই হ্যাকও হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে করণীয় কী? পাসওয়ার্ড মনে রাখার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে ইয়াহু ও মাইক্রোসফট সম্প্রতি বিকল্প পদ্ধতির ঘোষণা দিয়েছে। ইয়াহু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যবহারকারীর ইয়াহু অ্যাকাউন্টে সাইন ইন করার জন্য তাঁরা প্রতিবার মোবাইল ফোনে অস্থায়ী পাসওয়ার্ড বার্তা হিসেবে পাঠাতে পারে। মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের নতুন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১০ এর জন্য ফেসিয়াল-রিকগনিশন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্তকরণ প্রযুক্তি আনছে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা তাদের আঙুলের ছাপ বা মুখের ছবি পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। মাইক্রোসফট ও ইয়াহুর ঘোষণা দেওয়া এই বিকল্প পাসওয়ার্ড নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। নতুন দিন, নতুন পাসওয়ার্ড ব্যবহারকারীর সুবিধা ও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ইয়াহু একবারের ব্যবহার উপযোগী মোবাইল বার্তা ভিত্তিক পাসওয়ার্ড আনার কথা জানিয়েছে। একবার এই পদ্ধতি চালু করতে ইয়াহু মেইল বা অন্য সেবার জন্য আর পাসওয়ার্ড তৈরি করার বা মনে রাখার দরকার হবে না। অবশ্য ইয়াহুর এই পদ্ধতিটিকে ভালো ও নিরাপদ উপায় হিসেবে মনে হয়নি বিশেষজ্ঞদের কাছে। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ট্রিপওয়্যারের বিশেষজ্ঞ টিম আর্লিন বলেন, ‘ইয়াহু সাইবার দুর্বৃত্তদের কাছে আক্রমণের পথ আরও সহজ করে দিল। কারণ, ফোন চোরদের হাতে খুব সহজেই সাময়িক পাসওয়ার্ড চলে যেতে পারে। ফোনে পাসওয়ার্ড দিয়ে লক স্ক্রিন করার সুবিধা থাকলেও অনেকেই তা করেন না। এ ছাড়াও ফোন হ্যাক হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা দ্বি-স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা পদ্ধতিটি এর থেকে অনেক শক্তিশালী। কারণ, এতে ব্যবহারকারীকে প্রচলিত পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি ফোনের মাধ্যমে পাওয়া কোড পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়।’ টিম আর্লিনের সঙ্গে একমত ইয়াহুর নিরাপত্তা প্রধান অ্যালেক্স স্ট্যামোস। সমালোচকদের জবাবে তিনি বলেন, দ্বি-স্তরের নিরাপত্তা শক্তিশালী হলেও অনেকে বিরক্ত হয়ে তা ব্যবহার করেন না। এর পরিবর্তে ব্যবহারকারীরা তাঁদের পুরোনো পাসওয়ার্ড ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সহজ করে ব্যবহার করেন যাতে সহজে তাদের তা মনে থাকে। ঝুঁকির কথা বললে বলতে হবে যে, যেহেতু অধিকাংশ অনলাইন সার্ভিসে পাসওয়ার্ড রিসেট বা পুনরায় ঠিক করার সময় মোবাইলে বার্তা বা ইমেইলের মাধ্যমে করা হয় তখন ডিভাইস হারালে তাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।’ ইয়াহুর নিরাপত্তা প্রধান বলেন, পাসওয়ার্ডের আরও বিকল্প পদ্ধতি তৈরিতে কাজ করছে ইয়াহু। ভবিষ্যতের পাসওয়ার্ড আঙুল বা মুখ স্ক্যান করে কম্পিউটারে লগ-ইন করার বিষয়টি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো শোনালেও তা বাস্তব হতে যাচ্ছে। মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের উইন্ডোজ সফটওয়্যারে আসছে বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন প্রযুক্তি যাতে কম্পিউটার ও ফোন মুখ, চোখ বা আঙুলের সাহায্যে খোলা যাবে। উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীরা তাদের অন্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট নিরাপদ করতেও এই প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারবেন। মাইক্রোসফটের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বেলফিউরি এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছেন, মাইক্রোসফট এখন অ্যাপ ও ওয়েবসাইট নির্মাতাদের কাছে বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন প্রযুক্তির সফটওয়্যার সরবরাহ করছে যাতে তারা ব্যবহারকারীর শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটিকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির পাশাপাশি এনক্রিপ্ট কোড যুক্ত করতে পারে। এতে ব্যবহারকারীর ফোন বা কম্পিউটারের জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতির পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় একটি এনক্রিপশন কোড পাওয়া যাবে। অবশ্য গুগল অ্যান্ড্রয়েড ফোন আনলক করার জন্য ফেসিয়াল রিকগনিশন পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে যদিও পদ্ধতিটি এখনো জনপ্রিয় হয়নি। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক অনিল জৈন বলেন, ফোনে ফেসিয়াল রিকগনিশন পদ্ধতি প্রাথমিক অবস্থায় সমালোচিত হলেও এখন এর উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে অ্যাপল ও স্যামসাং তাদের ফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তবে মাইক্রোসফটের প্রযুক্তি জনপ্রিয় হবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। জ্যাভলিন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড রিসার্চের বিশেষজ্ঞ আল পাসকল জানিয়েছেন, ‘পাসওয়ার্ডের বিকল্প ব্যবস্থা করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিক অ্যাকাউন্টে একই রকম পাসওয়ার্ডের ব্যবহার অ্যাকাউন্ট হ্যাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই বর্তমান সময়ে পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা ব্যবস্থার চেয়েও দায়বদ্ধতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here